চাঁদের মাটি সংগ্রহে নয়া পদক্ষেপ মার্কিন মহাকাশ সংস্থা NASA-র। এ ক্ষেত্রে চারটি সংস্থার সঙ্গে মাথাপিছু প্রায় ১ ডলার থেকে ১৫,০০০ ডলারের বিনিময়ে চুক্তি করেছে NASA। এই বিষয়ে NASA-র কমার্সিয়াল স্পেসফ্লাইট ডিভিশনের ডিরেক্টর ফিল ম্যাক অ্যালিস্টার (Phil McAlister) জানিয়েছেন, চারটি সংস্থা থেকে মোট ২৫,০০১ ডলার পর্যন্ত মূল্যে চাঁদের মাটি অর্থাৎ রেগোলিথ কেনা হবে। সেই সূত্রে কলোরাডোর লুনার আউটপোস্ট অফ গোল্ডেনের (Lunar Outpost of Golden) সঙ্গে ১ ডলার, টোকিয়োর ispace Japan-এর সঙ্গে ৫,০০০ ডলার, লুক্সেমবার্গের ispace Europe-এর সঙ্গে ৫,০০০ ডলার ও ক্যালিফোর্নিয়ার Masten Space Systems of Mojave-এর সঙ্গে ১৫,০০০ ডলারের বিনিময়ে চুক্তি করা হয়েছে।
প্রথমে সংস্থাগুলি রেগোলিথ (Regolith) নামে অল্প পরিমাণ চাঁদের মাটি সংগ্রহ করবে। তার পর এই মাটি সংগ্রহ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য ও ছবি NASA-কে সরবরাহ করবে। জানা গিয়েছে, ২০২২ ও ২০২৩ সালের মধ্যে একটি মিশনের মাধ্যমে এই মাটি সংগ্রহের কাজ চলবে। তবে মিশনটির নাম এখনও জানা যায়নি। এই সংগ্রহের কাজ শেষ হওয়ার পর চাঁদের মাটির মালিকানা NASA-কে হস্তান্তরিত করা হবে। তার পর থেকেই এই সম্পত্তির উপর নিজস্ব অধিকার থাকবে মহাকাশ সংস্থাটির। নানা গবেষণার কাজেও ব্যবহার করা যাবে এই মাটি। আর এই পুরো কাজটি সম্পন্ন হবে আর্টেমিস (Artemis) প্রোগ্রামের অধীনে। উল্লেখ্য, এই আর্টেমিস (Artemis) প্রোগ্রামের অধীনেই, ২০২৪ সালের মধ্যে একজন পুরুষ এবং একজন মহিলাকে চাঁদে পাঠানোর পরিকল্পনা করছে NASA। এর পাশাপাশি মঙ্গলে অভিযানের ব্লু-প্রিন্টও তৈরি করে চলেছে এই সংস্থা।
বর্তমানে NASA যে পদক্ষেপ করতে চলেছে, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমনই জানাচ্ছেন, NASA-র এক শীর্ষস্থানীয় আধিকারিক মাইক গোল্ড (Mike Gold)। তাঁর কথায়, এই পদক্ষেপ খুব জরুরি। এতে বেসরকারি সংস্থাগুলিও একটি নতুন দিশা পাবে। এ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র NASA উপকৃত হবে না, সরকারি ও বেসরকারি নানা উন্নয়নমূলক কাজে গতি আসবে।
চাঁদে অভিযানের সময় এর আগে একাধিক প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হয়েছে। চাঁদের মাটি সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা গেলে সেই প্রতিবন্ধকতা অনেক অংশেই দূর হবে বলা আশা করা হচ্ছে। পাশাপাশি এই অভিজ্ঞতা মঙ্গলে অভিযানের ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে মনে করছেন গোল্ড। তিনি জানিয়েছেন, মঙ্গলে মানুষ পাঠানো চন্দ্রাভিযানের চেয়েও অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এর প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে। এই অভিযান অত্যন্ত কঠিন। অবশ্য চাঁদে অভিযানের নানা অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে তা মঙ্গলের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করাও বেশ কঠিন ব্যাপার, এ জন্য নিরন্তর প্রয়াস চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তবে চাঁদে এই সম্পত্তি কেনার একটি আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। এই পদক্ষেপ যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে গোল্ডের বক্তব্যে। তাঁর কথায়, এ ক্ষেত্রে আমেরিকার (America) নেতৃত্বদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শুধু প্রযুক্তি বা মহাকাশক্ষেত্র নয়, নীতিগত দিক থেকেও এটি অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য।
প্রসঙ্গত, এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে কার্যত একটি নজির গড়তে চলেছে আমেরিকা। কারণ বর্তমানে মহাকাশে সম্পত্তি কেনা বা সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির অধিকারের দাবি জানাতে সক্ষম হয়নি কোনও মহাকাশ সংস্থা ও দেশ। বড় বিষয় হল, এই বিষয়ে চিন (China) ও রাশিয়া (Russia) কেউই আমেরিকার সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছয়নি।#