কোটি মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু
কোটি মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু নিয়ে সরকার আশাবাদী যে, পদ্মা সেতু জিডিপির (গ্রস ডমেস্টিক প্রোডাক্ট) ১.৫-২ শতাংশ বৃদ্ধি করবে। সর্বোমোট ৪১টি স্প্যান ইতোমধ্যে স্থাপণ করা হয়েছে এবং ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটি পুরোপুরি দৃশ্যমান হয়েছে।
একজন অর্থনীতিবিদ বাসসকে জানান, পদ্মা বহুমুখী সেতু দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোর পরিবর্তন ঘটাবে। পাশাপাশি এটি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশকে সংযুক্ত করবে এবং যোগাযোগ, বাণিজ্য, শিল্প, পর্যটন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখবে।তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষ বহু বাধা অতিক্রম করার পরে আজ কংক্রিট স্তম্ভগুলিতে ৪১ টি স্প্যান সফলভাবে স্থাপণ করেছে। এই ব্রিজের উভয় পাশের সমস্ত রাস্তার নির্মাণকাজ, ৪১ টি স্প্যান এবং ৪২ টি পিলার বসানোর কাজ সমাপ্ত হয়েছে। অন্যান্য উপাদানগুলিও স্থিরভাবে ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে। পদ্মা বহুমুখী সেতুর প্রকল্প পরিচালক মোঃ শফিকুল ইসলাম বাসসকে বলেন, “আমরা মানের দিকে লক্ষ্য রেখে যাত্রীদের জন্য সেতুটি খোলার জন্য কঠোর পরিশ্রম করছি।”
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য হলো এই যে, পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে পদ্মা সেতু বৃহত্তম নির্মাণ অবকাঠামো।বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) কর্মকর্তাদের মতে, উপরের ডেকের চার লেনের রাস্তা সহ প্রায় ২২ মিটার প্রশস্ত কংক্রিট ডেক স্ল্যাব (উভয় পাশে ২.৫ মিটার শক্ত কাঁধ) এবং নীচের ডেকে একটি সিঙ্গল ট্র্যাক ডুয়েল গেজ রেল নির্মিত হবে। ডেকের উচ্চতা ১৩.৬ মিটার। ব্রিজটিতে ৭৬০ মিমি ডায়ার গ্যাস ট্রান্সমিশন লাইন, ১৫০ মিমি ডায়ার ফাইবার অপটিক্যাল এবং টেলিফোন নালী, উচ্চ ভোল্টেজ বৈদ্যুতিক লাইন, মেইন ব্রিজের নীচে ২ কিলোমিটার প্রবাহে পাইলে ফাউন্ডেশনের রিভার ইন প্ল্যাটফর্মে নির্মিত হচ্ছে।
মূল সেতুটির নির্মাণ কাজ চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থা (এমবিইসি) এবং নদীর শাষণ পরিচালনা করছে চীনের সিনো হাইড্রো কর্পোরেশন। প্রকল্পের বিবরণ অনুসারে, ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যানটি ৭ই অক্টোবর, ২০১৭ সালে শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টে স্থাপণ করা হয়।এটির পরে ২৮শে জানুয়ারী, ২০১৮ তারিখে দ্বিতীয় স্প্যানটি স্থাপন করা হয়েছিল। তৃতীয় স্প্যানটি ১১ই মার্চ ২০১৮ তে স্থাপণ করা হয়। সেতুটির চতুর্থ এবং পঞ্চম স্প্যানগুলি যথাক্রমে ১৩মে এবং ২৯শে জুন স্থাপন করা হয়।
বাসস-এর সাথে কথা বলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, যাত্রীদের জন্য সেতুটি খোলার জন্য একের পর এক স্প্যান বসানো হয়। তিনি মেগা প্রকল্পের নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করতে মাওয়া পয়েন্ট এবং জাজিরা পয়েন্টটি কয়েকবার পরিদর্শন করেন।ওবায়দুল কাদের বলেন, সরকার প্রথমবারের মতো পদ্মা সেতুর মতো একটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, যা আমাদের আত্মবিশ্বাসের কারণে সম্ভব হয়।
বাংলাদেশিদের পাশাপাশি, চীনা, আমেরিকান, ব্রিটিশ, ভারতীয় এবং জাপানি নাগরিকরা এই প্রকল্পে সুদীর্ঘ সময় ধরে কাজ করছেন। পদ্মা সেতু খোলার পরে দক্ষিণ অঞ্চলটি দেশের বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চল হয়ে উঠবে।#